আদিতমারী উপজেলার ভাষা ও সংস্কৃতিঃ
এ অঞ্চলের ভাষা ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সুপ্রাচীন। বাংলা ভাষার আদি নিদর্শন ৬৫০ থেকে ১২০০ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে রচিত ‘চর্যাপদ’। এর ভাষা-ভঙ্গি বিশেস্নষণে বলা হয়ে থাকে যে, বাংলা ভাষার উৎপত্তি ঘটেছে গৌড়ীয় প্রাকৃত থেকে গৌড়ীয় অপভ্রংশের মধ্য দিয়ে বঙ্গ-কামরম্নপী আদি সত্মর হতে। চর্যাপদের ভাষায় অত্র অঞ্চলের ভাষা-ভঙ্গির অনেক নিদর্শন লক্ষ করা যায়। উত্তরবঙ্গের অনেক গবেষক এ ভাষাকে সরাসরি বাংলা ভাষা না বলে ‘কামতাবিহারী ভাষা’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। এ অঞ্চলের লোকসমাজে প্রচলিত ভাষার লক্ষনীয় কিছু বিশেষ দিক নিমেণ প্রদত্ত হলো-
ক্রিয়াপদের আগে ‘না’-এর ব্যবহার। যেমন; না খাঁও(খাইনা), না যাঁও(যাইনা)।
‘র’ বর্ণের স্থলে ‘অ’ বর্ণ ব্যবহারের প্রবণতা। যেমন; অং (রং), অসূণ (রসূণ)।
‘ল’ বর্ণের স্থলে ‘ন’ বর্ণ ব্যবহারের প্রবণতা। যেমন; নাল(লাল), নাউ(লাউ)
স্থানের নামের শেষের বর্ণে ‘’’ থাকলে তা তুলে দিয়ে শব্দের শেষে ‘ত’ বর্ণ যুক্তকরণের প্রবণতা। যেমন; মাঠত(মাঠে), ঘাটত(ঘাটে), হাটত(হাটে)।
সম্বোধনের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত কতিপয় শব্দের উদাহরণ হচ্ছে-মুঁই(আমি), হামরা(আমরা), তুঁই(তুমি), তোমরাগুলা(তোমরা), অঁয়(সে), ওমরা/ওমরাগুলা(তারা)।
লোক সংস্কৃতিঃলোক সমাজে প্রচলিত ছড়া, ছেলস্নক(ধাঁ দাঁ বা ছিল্কা), প্রবাদ-বচন, মেয়েলি গীত, মন্ত্র লোকসঙ্গীত প্রভৃতি লোক সাহিত্যের মূল্যবান উপাদান। এ গুলোর মধ্য দিয়ে সন্ধান মিলে আবহমানকাল ধরে চলে আসা মানুষের রম্নচি, বিশ্বাস, আচার-আচরণ, সংস্কার, রসবোধ, সুখ-দুঃখ, উপদেশ, নিষেধ ইত্যাদির। নিমেণ এ অঞ্চলের লোক সাহিত্য ও সংস্কৃতির সংক্ষিপ্ত পরিচয় তুলে ধরা হলো-
ঘুমপাড়ানী ছড়া
আয় নিন্দো বায় নিন্দো
পাইকোরের পাত
কানকাটা কুকুর আইসে
ঝিৎ করিয়া থাক।
ছেল্লক
হাত আছে পাও নাই,
গলা আছে তলা নাই।
মাইনসক ঘিলি খায়,
কনতো শুনি কাঁয়। উত্তর-জামা
প্রবাদ বচন
কপাল গেইছে পড়িয়া,
দুধ খাবার কিননু গাই,
তাঁয়ও হইল আড়িয়া।
মেয়েলী গীত
বাঁশের মধ্যে বাঁশরী,
জমির মধ্যে হলুদী।
বাঁছার কাঁয় কাঁয় আছে দরদী,
তাঁয় বাটপে হলুদী।
মন্ত্র
শিংগী শিংগী চুচড়া মুড়ি,
কাঁয় দ্যাখে তোর বিষের হাড়ি।
বিষ খায় লাফেয়া,
শিংগী বেড়ায় দাপেয়া।
ঘর পোড়া যায় উয়া ফোটে,
শিংগীর বিষ ভাটি ছোটে।
আদিতমারী উপজেলা সংস্কৃতির এক পীঠস্থান । আদিতমারী উপজেলায় অনুষ্ঠিত নটকুর বান্নী, গোড়াঘাটের বান্নী, মাষাণের মেলা, দশহরার মেলায় জাতি, ধর্ম, বর্ণ, নির্বিশেষে হাজার হাজার মানুষ অংশ গ্রহণ করে থাকে।